পৃথিবীতে মোট ১৯৫ টি দেশ। এর মধ্যে এমন কিছু দেশ আছে, যেগুলি আয়তনে বিশাল। বিশাল দেশগুলির কথা আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি। কিন্তু এই পৃথিবীতেই এমন কিছু দেশ আছে, যেগুলি আয়তনের দিক থেকে এতই ক্ষুদ্র,যে সেগুলিকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ভাবতে অবাক লাগে। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দশটি স্বাধীন রাষ্ট্র সম্পর্কে আজ জেনে নিন৷
মাল্টা (malta) (৩১৬ বর্গকিলোমিটার)–অনেকগুলি দ্বীপের সমষ্টি এই মাল্টা। তার মধ্যে মাত্র তিনটি দ্বীপে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ বাস করে। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মাল্টা ছিল ব্রিটিশ কলোনি। বর্তমানে স্বাধীন এই ছোট দেশের আয়ের উৎস পর্যটনশিল্প।
মালদ্বীপ (Maldives) (২৯৮ বর্গ কিলোমিটার)–এই দেশটি প্রায় হাজারের বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশ। সব দ্বীপগুলিকে এক করলে যা আয়তন হবে,তা ছড়িয়ে আছে ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকায়। ১৯৬৫ সালে এই দ্বীপরাষ্ট্রটি স্বাধীন হয়। অসামান্য সুন্দর এই দেশটির মূল উপার্জন পর্যটন থেকে। ২০০৪ সালের সুনামিতে দেশটির অনেক ক্ষতি হয়েছিল।
সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস (sent kits i nevis)(২৬৯ বর্গ কিলোমিটার)– ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মাঝে দুটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই রাষ্ট্র সেন্ট কিটস নামেই বেশি পরিচিত। আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে ছোট স্বাধীন রাষ্ট্র এটি৷ ষোড়শ শতাব্দীতে ফরাসি ও ব্রিটিশ কলোনি ছিল এই দেশ৷ তার আগে দ্বীপদুটিতে বাস করত আমেরিকার উপজাতিরা। স্বাধীনতা পেলেও ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত হওয়ায় দেশের প্রধান ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ। দেশটি আয় করে আখ চাষ থেকে। এছাড়াও পর্যটন শিল্প থেকে আয় হয়।
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ (Marshall Iceland) (১৮১ বর্গ কিলোমিটার)– উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। জনসংখ্যা ৬৮ হাজার। মাত্র ৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন। এখানে বাস করেন মাইক্রোনেশিয়ানরা। ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপীয়রা এই দেশটি শাসন করত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানে হানা দিয়েছিল জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা শাসন করে দেশটির। ১৯৭৯ সালে স্বাধীন হয় । আমেরিকা ৬৭ টি পরমাণুবোমা পরীক্ষা করেছিল এই দেশের ঘাঁটি থেকে। বর্তমানে দেশটির মূল উপার্জন সমুদ্রে টুনা মাছ ধরার মাধ্যমে৷
লিচেনস্টাইন (১৬০ বর্গকিলোমিটার)– আল্পসের কোলে লুকিয়ে পৃথিবীর অন্যতম ধনী রাষ্ট্র লিচেনস্টাইন। সুইৎজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমানা আছে দেশটির। মূল উপার্জন আসে দেশের ব্যাঙ্কগুলি থেকে। সারা বিশ্বের মানুষ টাকা জমান এদেশের ব্যাঙ্কগুলিতে। কারণ ট্যাক্স খুবই কম, কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া যায় মোটা সুদ।
সান মারিনো (San Marino) (৬২ বর্গ কিলোমিটার)–ভ্যাটিক্যান সিটির মতোই, সান মারিনোকে চারদিক থেকে ঘিরে আছে ইতালি। ইতালির উত্তরে পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত সান মারিনো। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো স্বাধীন দেশ এটি। ৩০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে দেশটির নাম লেখা আছে ইতিহাসে। উপার্জন ব্যাঙ্কিং ও পর্যটন শিল্প থেকে। ১৯৯৩ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে মাত্র ৮.৩ সেকেন্ডে গোল দিয়েছিল সান মারিনো। যে রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি।
টুভালু (Tuvalu) (২৫ বর্গ কিলোমিটার)–ন’টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত টুভালু দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পাপুয়া নিউগিনির কাছে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র কয়েক ফুট ওপরে এই রাষ্ট্রটি। বিশ্বউষ্ণায়নের ফলে জলতল বাড়লে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ডুবে যেতে পারে এই দেশ।এই দ্বীপরাষ্ট্রে পানীয় জলের অভাব। বৃষ্টি থেকে মেলে পানীয় জল। নারকেল চাষ আর পর্যটন শিল্প আয়ের উৎস৷
নাউরু (nauru) (২১ বর্গ কিলোমিটার)–পলিনেশিয়ানরা কয়েক হাজার বছর আগে ক্যানো করে এসেছিল এই দেশে। ১৮৮৮ সালে দ্বীপটি দখল করে জার্মানি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর পরে জার্মানির কলোনিতে হানা দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৬৬ সালে স্বাধীনতা পায় দেশটি। ফসফেট খনি থেকে দেশ এর মূল আয়৷ মাত্র ১০ হাজার মানুষ বাস করেন এই দেশে।
১১৯ বছর পর অসমে দেখা মিললো বিরল প্রজাতির হাঁস, রাতারাতি ভাইরাল ভিডিও
মোনাকো (Monaco) (৫৪১ একর)–তিনদিকে ফ্রান্স ও একদিকে সাগর দিয়ে ঘেরা মোনাকো। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর ধনী দেশগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এই দেশ শাসন করে গ্রিমালডি পরিবার ৭০০ বছর ধরে। এখন শাসন করছেন যুবরাজ দ্বিতীয় অ্যালবার্ট। জুয়া খেলা এখানে আইনসিদ্ধ। মোনাকোর রাজধানী মন্টিকার্লোতে ১৯২৯ সাল থেকে মন্টিকার্লো কার-র্যালি হয়। পৃথিবীর একমাত্র ফরম্যুলা ওয়ান রেস যা শহরের রাস্তায় হয়।
ভ্যাটিক্যান সিটি (vartican city) (১২১ একর)–পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট স্বাধীন রাষ্ট্র। ইতালির রোম এর মধ্যে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এই দেশ। এই দেশে মাত্র ৮৪০ জন নাগরিক। বাসিন্দারা বেশিরভাগই যাজক ও সুইস প্রহরী। কর্মীরা আসেন প্রাচীরের বাইরের দেশ ইতালি থেকে। তাঁরা রোজ এক দেশ থেকে অন্য দেশে কাজ করতে যান। এখানে কোনও শিল্প নেই, কোনও কৃষি জমি নেই। এদের আয় স্মারক বিক্রি ও অনুদান থেকে। আয়ের কিছুটা আসে পর্যটকদের কাছ থেকে। এই দেশের প্রধান হলেন পোপ।