অনেকদিন থেকেই কেন্দ্রের কাছে নানারকম রাজ্য থেকে সংরক্ষণকে ঘিরে অনেক আবাদন পত্র গিয়েছে। আর আমরা জানি কিছুদিন হল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির আপ্রান প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় সরকার উচ্চপদস্থ গরিব মানুষের কথা ভেবে সংরক্ষণের বিল পাস করিয়েছে। শুধু তাই নয় বিগত সময়ে এক দুটি রাজ্যে এই সংরক্ষণের প্রস্তাব ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে । এবার উত্তরপ্রদেশের যোগীর সরকার আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বর্গের লোকেদের জন্য ১০ শতাংশ আরক্ষণ এর জন্য অধ্যাদেশ সম্মন্ধিত প্রস্তাব গুলোকে মঞ্জুরি দিয়ে দিয়েছে। সেইসঙ্গে ইউপিতে এই আরক্ষণ এর ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।
উত্তর প্রদেশে গরিবদের সংরক্ষণ দেওয়াকে নিয়ে এবার দ্বিতীয় তম রাজ্য হয়ে উঠেছে । যোগী সরকার এর আগে ঝাড়খন্ড এবং গুজরাটের সরকার সংরক্ষণ থেকে মঞ্জুরি দিয়ে দিয়েছে। বিগত শনিবারে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সামাজে আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের চাকরি এবং শিক্ষার জন্য ১০ শতাংশ সংবিধান সম্বন্ধিত ২০১৯ এর (১০৩ নং সংশোধন) নীয়মটিকে মঞ্জুরি দিয়ে দিয়েছেন। এরপর দেশে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাক্ষেত্র গুলিতে তাদের জন্য ১০শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ১৫ এবং ১৬ নং সংশোধনীতে , আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিদের চাকরি এবং শিক্ষার দিক থেকে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার নিয়ম লাগু করা হয়েছে।
কেবলমাত্র যে সকল ব্যাক্তিদের বার্ষিক আয় ৮ লাখ এর মধ্যে তারাই কেবল এর সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। গুজরাট,ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশে ও বিজেপি সরকার এই প্রকল্পটি লাগু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু অনেকগুলি বিপক্ষদল বিজেপির এই সিদ্ধান্তটির বিরোধিতা করতে পিছু হাটেনি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই প্রকল্পটির বিরোধিতা করে তিনি জানিয়েছেন যে, এই প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গে লাগু করা যাবেনা।মমতা ছাড়াও, ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনও এই দারিদ্র্য ভিত্তিক রিজার্ভেশনকে তীব্রভাবে বিরোধিতা করেছেন।
শুধু এটাই নয়, এ বিষয়ে ডিএমকে মাদ্রাজ হাইকোর্টের কাছে আবেদন করেছেন। ডিএমকে কর্তৃক দায়ের করা পিটিশনে বলা রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বিভাগগুলির জন্য কেন্দ্র দ্বারা বাস্তবায়িত রিজার্ভেশন সিস্টেম সংবিধানের বিরুদ্ধে এবং এসসি-এসটিয়ের বিরুদ্ধে। এই প্রসঙ্গটি তুলে ডিএমকে,ইন্দিরা সাহানির মামলাটিতে উল্লেখ করে বলেছেন অর্থনৈতিক মানদন্ড কখনই সংবিধান আরক্ষনের একটিমাত্র আধার হতে পারেনা। তবে সংবিধান সংশোধন পূর্ণ রূপে সংবিধানকে লঙ্ঘন করে। ইন্দিরা সাহানীর মামলাটিতে ৯ জন জজ এটা বলেছিলেন যে ,অর্থনৈতিক মানদন্ড কখনোই আরক্ষণ এর একটি মাত্র আধার হতে পারে না।
এই সংশোধনী সম্পূর্ণ দোষ পূর্ণ আর এটিকে সম্পূর্ণ অবৈধ বলে মনে করা উচিত। কারণ, এটি পূর্ণরূপেই সংবিধানের আদেশকে অমান্য করেছে। এছাড়াও অরুণ জেটলি বললেন, এই প্রকল্পে লাভবান হবেন অনেক সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয়, এছাড়াও নিম্ন দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাকরির সুযোগ এবং ১০% সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়াও অরুণ জেটলি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করা রাজনৈতিক দলগুলিকে জবাব দিয়ে বলেন,কংগ্রেস শুধু উচ্চ সমাজের লোকেদের কথা ভাবে তারা কখনো নিম্ন ও গরীবদের কথা ভাবেনি এবং তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই সংরক্ষণের প্রস্তাবের জন্য কংগ্রেস সরকার মন থেকে অনুমতি দিচ্ছে না। আবার কংগ্রেস সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্বন্ধে তেমন ভাবে কোন সমর্থনের হাত বাড়াননি।
অরুণ জেটলি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মাননীয় নরেন্দ্র মোদীজির নেওয়া এই সংরক্ষণ প্রকল্প সাধারণ নিম্ন শ্রেণীর জন্য কোন সুযোগের থেকে কম নয়। শুধু তাই নয়, ভারতে দিন দিন বেকারত্ব ও গরিবের সমস্যা তো লেগেই রয়েছে আর তাই কেন্দ্রীয় সরকার ভারতবর্ষের জিডিপিকে আরো উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতবর্ষ থেকে বেকারত্বকে দূরীকরণ করতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি উপরে সমর্থন করলেও ভেতর মন থেকে কোন দলই এই সংরক্ষণের সমর্থন করছে না। অর্থাৎ বাস্তবে রাজনৈতিক দলগুলি এই সংরক্ষণের ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। আর এড়িয়ে যাবে না কেন, রাজনৈতিক দলগুলি ভালোভাবেই জানে যে, এই সংরক্ষণের হাত ধরে মোদি সরকার সাধারণ মানুষের মন জয় করে নিতে পারবে। আর সাধারণ মানুষের মন জয় হলেই তো সামনে আসা লোকসভায় ভারতীয় জনতা পার্টির পদ্মফুল ফুটে উঠবে।
সুতরাং, বিরোধী দল গুলি যদি মোদি সরকারের এই প্রস্তাবকে সমর্থন নাও করে তবুও, এই প্রস্তাবের বিল পাস হওয়ায় সাধারণ গরিব মানুষদের পাশে মোদি সরকার আছে তা প্রমাণ হয়ে গেছে। আর এই সংরক্ষণের ফলে মোদি সরকার যে লোকসভা ভোটে সাধারণ মানুষের সাথ পাবে তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। এবার খালি দেখার বিষয় বিরোধী দলগুলি কি মন থেকে এই সংরক্ষণের প্রস্তাব কে মেনে নিতে পারবে কিনা ! এ ব্যাপারে আপনাদের কি মতামত আমাদের অবশ্যই জানাবেন। আরো এরকম নতুন নতুন খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েব পোর্টালটিতে।