একটি সংসারের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ থাকা বিষয় স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কিন্তু কোন কোন পরিবারে প্রতিনিয়ত পারিবারিক হিংসার শিকার হতে হয় নারীদের। শারীরিক এবং মানসিকভাবেই হয়রানি শিকার হয়ে কোন কোন মহিলা আত্মহত্যা করে কোন কোন মহিলা আবার সংসার ছেড়ে বেরিয়ে যায়। তবে এমন কিছু মহিলা রয়েছেন যারা অত্যাচার সহ্য না করে নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে। এমন কিছু করার চেষ্টা করেন এই সমস্ত মহিলারা যাতে স্বামী কেন কোন অন্য পুরুষ চোখের দিকে না তাকাতে পারে। এমন একটি উদাহরণ আজ আপনাদের দেবো।
ভারতী সুমেরিয়া এমন একজন নারী যিনি সংসারে অত্যাচারের শিকার না হয়ে সংসার থেকে বেরিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন। ভারতীর জন্ম মুম্বাইয়ের ভিওয়ান্ডিতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। অল্প বয়সেই ভারতীকে বিয়ে দিয়ে দেন তার বাবা। বিয়ের কিছু সময় পর। এটি কন্যা সন্তানের জন্মদান ভারতী এবং কয়েক বছর পর দুটি জমজ ছেলের জন্ম হয়। সে সময় তার স্বামী বেকার ছিলেন।
আস্তে আস্তে শুরু হয়ে যায় পারিবারিক কলহ। সঞ্জয় প্রতিনিয়ত ভারতীকে মারধর করতে শুরু করেন এবং সেটি একসময় নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপারটি এতটাই গুরুতর হয়ে গিয়েছিল যে কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল ভারতীকে। এক সময় বাধ্য হয়ে ভারতীয় নিজের বাবা-মার বাড়িতে চলে আসেন। ডিপ্রেশনে আচ্ছন্ন ভারতী এক মাস কারো সাথে কোন কথা বলেননি। এই সময় একমাত্র তাঁর নিজের সন্তান ছিলেন তার আশার আলো।
আস্তে আস্তে নিজেকে শক্ত করতে থাকেন ভারতী। বাচ্চাদের স্বার্থে চাকরি খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি। ২০০৫ সালে একটি ছোট কারখানা শুরু করে তিনি সেখানে বাক্স এবং টুথব্রাশ এবং টিফিন বক্স তৈরি করতে থাকেন। মেয়েকে সাহায্য করার জন্য ভারতীর বাবা ভারতীকে ৬ লক্ষ টাকার দেন এবং কারখানায় নিয়োগ করা হয় দুজন কর্মচারী। আস্তে আস্তে ভারতী নিজের ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসেন।
প্রায় তিন চার বছর পর তিনি PET নামে একটি কারখানা শুরু করেন, যেখানে প্লাস্টিকের বোতল তৈরি হয়। তিনি নিজেই নিজের পণ্যের মান পরীক্ষা করতেন। ধীরে ধীরে বিসলেরি এবং অন্যান্য বড় বড় সংস্থার তরফ থেকে তিনি অর্ডার পেতে শুরু করেন। ২০১৪ সালে আরো একবার আসি ঐদিন, যেদিন ভারতীর গায়ে আবার হাত তোলে তার স্বামী সঞ্জয়। সেদিনের পর থেকে ভারতীয় এবং তার সন্তান কেউই সঞ্জয়ের কাছে ফিরে যাননি। আজ ভারতী প্রায় ৪ কোটি টাকার বার্ষিক টার্ন ওভার করছেন এবং তিনি চারটি কারখানার মালিক।