ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার কাজে হয়তো অনেকেই লিপ্ত ছিলেন কিন্তু কেউ চোখের সামনে ভারতের জন্য লড়েছেন আবার কেউ চোখের পিছনে। যারা চোখের সামনে ছিলেন দেশবাসী হয়তো তাদের মনে রেখেছেন। আর যারা গোপন সূত্রে দেশকে স্বাধীন হওয়ার কাজে নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে লিপ্ত ছিলেন তাদেরকে হয়তো দেশবাসী ভালো করেই চেনেন না। স্বাধীনতা হওয়া আজ ৭১ বছর হতে চলল । দেশবাসীর মন থেকে হয়তো মুছে গেছে তার স্মৃতি।ভিয়েতনামে এক বিপ্লবী পরিবারের ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ সরস্বতী রাজামনি। ছোট থেকেই তার দেশের প্রতি প্রেম ছিল প্রশংসনীয় এবং তিনি মাত্র ১০ বছর বয়সে জাতীয় জনক মহাত্মা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। মহাত্মা গান্ধী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে দেখেছিলেন যে বাড়ির বাগানে বন্দুক চালানোর অনুশীলন করছে ছোট্ট সরস্বতী৷
বড় হওয়ার সময় সরস্বতী কানে আসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের কথা। আর সেই সাথে সুভাষ চন্দ্র বোসের বক্তৃতা শুনে তার দেশপ্রেম তুঙ্গে ওঠে । এভাবেই দিন কাটতে থাকে, যখন তার ১৬ বছর হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর আজাধীন ফৌজকে অনুদান প্রাপ্তির জন্য রেঙ্গুনে নিয়ে যান । আর সে সময় সরস্বতী রাজমনি নিজের হিরে সোনার গয়না সবকিছু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে অনুদান স্বরূপ তুলে দেন। কিন্তু আপনারা জানলে অবাক হবেন, তার পরের দিন সুভাষচন্দ্র বসু রাজমনির বাড়িতে গিয়ে সমস্ত গয়না ফিরিয়ে দেন এবং সরস্বতী রাজমনি কে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর একঅংশ হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। আর তখন থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের জন্যে সরস্বতী রাজমনি কাজ করা শুরু করে দেন। সরস্বতী রাজমনি ছেলের ছদ্মবেশে সে সময়কার ব্রিটিশ শাসক দের বাড়িতে কাজ করতে যেতেন ।
এছাড়াও তিনি শাসকদের প্রতিটি বৈঠকের খবর গোপনীয়ভাবে সুভাষচন্দ্র বসুর কাছে পৌঁছে দিতেন। এইভাবে তিনি দু’বছর গোপনে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর জন্য নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। যদিও পরবর্তী সময় দুর্ভাগ্যবশত তিনি ধরা পড়ে যান এবং ব্রিটিশ সরকারের গুলি খেয়ে তিনি এবং তার ৪ বন্ধু ৩ দিন গাছের উপর লুকিয়ে ছিলেন। জলের মতো সময় পেরিয়ে গেছে , স্বাধীনতা পেয়েছে ভারত কিন্তু , সরস্বতী রাজমনি জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। অনেকদিন থেকেই তিনি চেন্নাইয়ের এক ফ্ল্যাটে থাকতেন । যদিও তামিলনাড়ু সরকার এই বিপ্লবীকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।