তিনি নিজের মৃত্যু দূত কে আসতে দেখেছিলেন যাকে আজও আমরা ভুলিনি। তার বলা বাণী আজও আমাদের মনে গেঁথে আছে। তিনি হলেন স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ। মৃত্যুর দূত কে তিনি আসতে দেখেছিলেন চাইলে হইতো ফিরিয়ে দিতে পারতেন , কিন্তু তিনি তা করেননি । স্বামী বিবেকানন্দের একমাত্র প্রিয় ভক্ত ভগিনী নিবেদিতাকে বলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। যদিও সেই মুহূর্তে নিবেদিতা কিছু না বুঝতে পারলেও স্বামীজীর মহাপ্রয়ানের পর তিনি তা বুঝতে পারেন। ১৯০২ সাল ২ই জুলাই দিনটি ছিল স্বামীজীর মৃত্যুর দু’দিন আগের কথা , স্বামীজি তার ভক্ত ভগিনী নিবেদিতা কে নেমন্তন্ন করেন।
যদিও সেই দিনটিতে স্বামীজি ব্রত রেখে ছিলেন এবং তিনি কিছু মুখে দেবেন না এই কথা নিবেদিতাকে জানালে , তিনি স্বামীজি নিমন্ত্রনে অস্বস্তির মধ্যে হ্যাঁ অথবা না ঠিকভাবে বলে উঠতে পারছিলেন না। আর এর পরের ঘটনাটি হলো আরো চমৎকার পূর্ণ , স্বামীজি নিবেদিতাকে ভাত, ডাল ,কাঁঠাল , দুধ ইত্যাদি খেতে দিলেন। যদিও কিছুক্ষণ না না করার পর নিবেদিতা খাওয়া শুরু করলেন এবং খাওয়ার সময় স্বামীজি নিবেদিতার সাথে অনেক কিছু কথা বললেন।
খাওয়া শেষ হওয়ামাত্রই বিবেকানন্দ নিবেদিতার হাত ও পা জল দিয়ে ধুয়ে দিলেন এবং সেই মুহূর্তে স্বামীজীর এই কর্মে নিবেদিতা কি করবেন তার সংশয় পড়ে তিনি নির্বাক হয়ে রইলেন । শেষমেষ নিবেদিতা বলে উঠলেন, ‘এটা কি করলেন আপনি,এটা আমার করার কর্তব্য ‘।
স্বামীজি উত্তরে বললেন, “তুমি যীশুর কথা পড়েছ যীশু তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন “। তার পরিপ্রেক্ষিতে নিবেদিতা বলেন,’ সে তো যীশুর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ‘ , বিবেকানন্দ হেসে বলেন, “you silly girl” । ভগিনী নিবেদিতা স্বামীজীর কথা ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেননি। ১৯০২ সাল ৫ ই জুলাই , এই দিনটিতে বেলুড় মঠের এক সাধক নিবেদিতাকে চিঠি লিখে পাঠান। স্বামীজীর মহাপ্রাণ ঘটেছে। এর আগে দিন ৪ ই জুলাই রাত্রি ৯: ১০ এ সময় স্বামীজির দেহ ধরাধাম ছেড়ে চলে গেছে। সেই মুহূর্তে নিবেদিতা অবাক , ভাবছেন অন্য কিছু কথা , স্বামীজীর মৃত্যু একই সময়ে ( ৯:১০ এ) ভগ্নী নিবেদিতা স্বপ্নে দেখেছিলেন, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের দেহ দ্বিতীয় বার ধরাধাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাহলে কি স্বামীজির দেওয়া দ্বিতীয় মৃত্যুর বার্তা এটিই ছিল !
শুধু তাই নয়, স্বামীজি তার অনুগামী স্বামী অভেদানন্দকে তার মৃত্যুর ৫ বছর আগেই তার মহাপ্রয়াণে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন , ” বুঝলে অভেদানন্দ আমি হয়তো আর পাঁচ ছয়েক বছর বাঁচবো, আমার আত্মা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে । এত বড় হয়ে যাচ্ছে যে ,শরীরের মধ্যে থেকে তাকে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না , সে বারে বারে এ শরীর ছেড়ে পালাতে চাইছে “।