যাত্রা শুরু করেছিলেন ছোট পর্দা থেকে। তারপর থিয়েটারের মঞ্চে আনাগোনা । এরপর বলিউডে একের পর এক কাজ প্যায়ার কা পঞ্চনামা, ভার্জিন ভানুপ্রিয়া, ইরাদা-সহ একাধিক ছবি ও ওয়েব সিরিজে। রুমানা মোল্লা বলিউডের এই সময়ের পরিচিতি বাঙালি অভিনেত্রী।
তাঁর কাছে জীবনের পথ শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা৷ তিনি জানান, ” আমার পরিচিত কেউ কোনওদিন বলিউডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সেই জায়গা থেকে অভিনয়ের জগতে নিজের জায়গা করে নেওয়াটা বেশ কঠিন। আমি বাইরে থেকে মুম্বই এসেছিলাম কেবল অভিনয়ের টানে। কেবল বলিউডে নিজের জায়গা নয়, মায়ানগরীতে থাকার জায়গার ব্যবস্থাও করতে হয়েছিল নিজেকেই। আর বলিউডে জায়গা করে নেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হল ধৈর্য্য। পরিস্থিতি বুঝতেই প্রথম ৩-৪ বছর কেটে যায়, ” সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন অভিনেত্রী।
বলিউড সবরকম অভিজ্ঞতাই হয়েছে তাঁর৷ রুমানা জানান, সবচেয়ে স্মরণীয় কাজ ‘ইরাদা’। বলছেন, “ইরাদা সবসময় আমার কাছে বিশেষ একটা কাজ। ওখানে আমি নাসিফ স্যারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। এছাড়াও ‘প্যায়ার কা পঞ্চনামা ২’-তে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখান থেকেও অনেক কিছু শিখেছি। ওটাই আমার করা প্রথম বড় চরিত্র। গ্ল্যামার দুনিয়ার একটা চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা সোজা নয়, সেটা বুঝেছিলাম। ইরাদার পর প্যায়ার কা পঞ্চনামা ২-তে ছিল একেবারে অন্যরকম একটা চরিত্র। প্রত্যেকটা ছবিই একটা নতুন অভিজ্ঞতা।”
একাধিক ওয়েব সিরিজে কাজ করেছেন রুমানা। ‘সিনেমার ক্ষেত্রে চরিত্রটি একটি গল্পেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ওয়েব সিরিজে একই চরিত্র অনেকগুলি সিজন ধরে চলে তাই একটাই চরিত্রের মধ্যে অনেক নতুনত্ব থাকে৷ এই বিষয়টা আমার বেশ আকর্ষণীয় লাগে।’
রুমানা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, বলিউডে নাসিরুদ্দিন শাহ, রাধিকা আপ্তে, ইরফান খানের মতন প্রতিভাবান অভিনেতার অভিনয় জীবন শুরু থিয়েটার থেকেই। দক্ষতা বৃদ্ধিতে কতটা সাহায্য করেছিল মঞ্চ? তিনি বলেন , ‘অভিনয় শেখার জন্য থিয়েটারের বিকল্প হয় না। আর মঞ্চাভিনয় করলে বহু মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ থাকে। একজন অভিনেতার সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থাকা খুব জরুরি।
আর থিয়েটারে কোনও কাট হয় না, রিটেক হয় না। এই অভ্যাসটা পরবর্তী ক্ষেত্রে অভিনয়কে অনেকটা ধারালো করে তোলে বলে আমার মনে হয়। আর অনুভূতিকে নিজের বশে রাখার শিক্ষা দেয় থিয়েটার। তাই অভিনয়ের মাধ্যমে যে কোনও পরিস্থিতি ফুটিয়ে তোলার একটা দক্ষতা তৈরি হয়ে যায়। ”
যখন বাংলার সঙ্গে দুটো ইংরাজি মিশিয়ে কথা বলতেই আমরা অভ্যস্ত৷ সেখানে ঝরঝরে বাংলায় কথা বলছিলেন রুমানা। ” আমার মা বাঙালি। কিন্তু আমি কোনওদিন টলিউডে অভিনয় করার চেষ্টা করিনি। মনে হয়েছে বলিউড আর টলিউড একসঙ্গে সামলানো কঠিন। তবে কোনওদিন বাংলায় অভিনয় করার সুযোগ পেলে অবশ্যই করব।’ জানিয়েছেন রুমানা৷
বাংলায় পছন্দের অভিনেতা কে? ‘প্রসেনজিৎ স্যার (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)! ওনাকে কে না চেনে.. এখনও মনে আছে মা খুব প্রসেনজিতের সিনেমা দেখতেন।’ বললেন, ‘আর অপর্ণা ম্যাম (অপর্ণা সেন), কঙ্কনা সেনশর্মা আর রাইমা সেন। আমরা মনে হয় খুব বেশি ছবি না করলেও, রাইমা ভীষণ ভালো অভিনেত্রী।’
Mukesh Ambani-কে সরিয়ে এশিয়ার ধনী ব্যক্তিদের শীর্ষ তালিকায় নাম জলের ব্যবসায়ীর
বলিউডে কোনও পূর্বপরিচিতি ছিল না রুমানার। কাজ করতে গিয়ে কখনও অসুবিধে হয়েছে? গ্রাস করেছে অবসাদ? রুমানা জানান, ” ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই আসেন অবান্তর আশা নিয়ে। এই ইন্ডাস্ট্রি প্রত্যেকের ধৈর্য্য আর মানসিক শক্তিকে পরীক্ষা করবেই। টিকে থাকার জন্য মানসিকভাবে শক্ত থাকা আর নমনীয় হওয়াটা খুব জরুরি। আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে স্টার হতে আসিনি, অভিনয় করতে এসেছি। তাই যতটা সুযোগ পেয়েছি, নিজের সেরাটা দিয়ে অভিনয় করার চেষ্টা করেছি।”
নিজেকে খুশি রাখার জন্য তিনি থিয়েটার করেন৷ তিনি মনে করেন, কাজ আর ব্যক্তিগত জীবন আলাদা রাখা উচিত।
বলিউডে ‘ভিকি কৌশল, আর টব্বুর সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছেন৷ টাবুর ভক্ত জানিয়েছেন। কোনও একটা চরিত্রে, এক মিনিটের জন্য হলেও আমি টব্বুর সঙ্গে অভিনয় করতে চাই।’
কাজের সূত্রেই কলকাতা এসেছিলেন রুমানা। কলকাতার সবাই নাকি খুব শান্তিপ্রিয়! রুমানা বলছেন, ‘কলকাতার একটা নিজস্ব ছন্দ রয়েছে, সংস্কৃতি রয়েছে। সেটা কেউ ভাঙে না। কলকাতা গেলেই আমার মনে হয়, এখানে চাপ না নিয়ে হালকাভাবে কাজ করা যায়।’ আপাতত তার হাতে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক প্রোজেক্টের কাজ। সেইসঙ্গে চলছে ‘হাউ টু কিল ইওর হ্যাজব্যন্ড’ ওয়েব সিরিজ ।