উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় হড়পা বান কেন দেখা দিল, সেই বিষয়ে এখনও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। তবে অনুমান, হিমানী সম্প্রপাত বা হিমবাহ হ্রদের হঠাৎ ফেটে যাওয়ার কারণে অর্থাৎ গ্লেসিয়াল লেক আউট বার্স্ট ফ্লাড (GLOF) এর কারণে এই বিপর্যয় ঘটেছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের জেরে এখনও পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০৪ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ৷
পুণের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ট্রপিকাল মেটিরিওলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী ডক্টর রক্সি মেথিউ কোল জলবায়ুর পরিবর্তনকেই এই ঘটনার অন্যতম কারণ বলেছেন। উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় তুষারপাত হয়েছে, সেই বরফ জলের ওপর জমে যাওয়ায় ফ্ল্যাশ ফ্লাড হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন নি ডক্টর কোল। ভারতের জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতি দশকে জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য হিমালয়ের তাপমাত্রা ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে গড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে ৪০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় উষ্ণায়নের পরিমাণ দশক প্রতি ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিগত কয়েক দশকে হিমালয়ের বরফ গলতে শুরু করেছে৷
কেন করা হচ্ছে বিপর্যয় ম্যাপিং?
টেরি (TERI)-র সেন্টার ফর হিমালয়ান ইকোলজির হিমবাহবিদ শ্রেষ্ঠ তয়াল বলেছেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করা যাবে না ঠিকই, কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিপর্যয়প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা গেলে সম্পদ ও মানুষের প্রাণহানি অনেক কম হবে।
বিপর্যয় ম্যাপিং কীভাবে হচ্ছে?
যে সমস্ত হিমবাহ হ্রদ খুব দ্রুত আয়তন বৃদ্ধি করছে বা যে সব হ্রদ অঞ্চলে ক্রমাগত বৃষ্টি হয়ে চলেছে, সেগুলিকে খুঁজে বের করা হচ্ছে। এই সব অঞ্চলেই বিপর্যয়ের আশঙ্কা বেশি।
হিমবাহ নিয়ে গবেষণা করার জন্য এখন অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে অনেক নতুন কাজের সুযোগ। গ্লেসিওলজি বা হিমবাহ এখন শুধু কেরিয়ার তৈরিতে নয়, ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করছে গবেষণামূলক কাজকর্ম করার জন্য৷
ওয়াদিয়া ইন্সটিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজির গ্লেসিওলজি ও হাইড্রলজি বিভাগের বিজ্ঞানী ডক্টর সন্তোষ কুমার রাই এর বক্তব্য, “সতর্কতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতকে খুব তৎপর থাকতে হবে এবং অত্যন্ত দ্রুত এই কাজ করতে হবে। এই ওয়ার্নিং সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাই। কারণ এতে আপৎকালীন সময়ে আরও দ্রুত বিপর্যয়ের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।”
বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবারও বড়সড় চাপে বিজেপি, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মুকুল দিলীপদের
তবে ভারতের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি বিপদসীমার বাইরে নয় কলকাতা। উত্তরাখণ্ডের মতো বিপর্যয় ঘটতে পারে শহর কলকাতাতেও। বিজ্ঞানীদের দাবি, কলকাতা পড়তে পারে মেঘভাঙা বৃষ্টির কবলে। গোটা শহরটাই চলে যাবে জলের তলায়। কলকাতার বিপদ যে ক্রমশ বাড়ছে তা বেশ কয়েক বছর ধরেই স্পষ্ট। ২০০৯ সালের আয়লা বুঝিয়ে দিয়েছিল৷ আমফান কার্যত গোটা শহর তছনছ করে দিয়েছিল শহর। পরিবেশবিদদের দাবি, আসলে শহরের বিপদ বাড়াচ্ছে বঙ্গোপসাগরের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি। তার ফলে এখন ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। এতেই বিপদ বাড়ছে৷