এ বছর দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ করছে। এই উপলক্ষে সারা ভারতে আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আবেদনে ঘরে ঘরে চলছে তিরঙ্গা প্রচারণা। তিরঙ্গা উত্তোলনের জন্য জনগণকে আহ্বান জানানো হচ্ছে, কিন্তু এই তিরঙ্গার পেছনের গল্প অনেক লম্বা। গত ১১৬ বছরে দেশে ছয়বার পতাকা বদল হয়েছে। স্বাধীনতার বার্ষিকীতে আমাদের জাতীয় পতাকার এই যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকগুলি কী ছিল এবং কখন, কী পরিবর্তন হয়েছিল তা জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেষ পরিবর্তন ১৯৪৭ সালে ঘটেছিল। আসুন জেনে নেওয়া যাক ইউনিয়ন জ্যাক থেকে তিরঙ্গা পর্যন্ত যাত্রা সম্পর্কে।
ভারতের স্বাধীনতার লড়াই যখন তীব্রতর হচ্ছিল, তখন বিপ্লবী দলগুলি তাদের নিজস্ব স্তরে স্বাধীন জাতিকে আলাদা করার জন্য তাদের নিজস্ব পতাকা প্রস্তাব করছিল। দেশে প্রথম পতাকা ১৯০৬ সালে উপস্থিত হয়েছিল। এটি ১৯০৬ সালের ৭ই আগস্ট কলকাতার পার্সিবাগান চকে (বর্তমানে গ্রীন পার্ক, কলকাতা) উত্তোলন করা হয়েছিল। এই পতাকায় তিনটি রঙের ফিতে ছিল।এগুলোর উপরে সবুজ ডোরা, মাঝখানে হলুদ এবং নীচে লাল।এর উপরের রংটিতে আটটি সাদা রঙের পদ্মফুল ছিল। মাঝখানে হলুদ ডোরা নীল রঙে বন্দে মাতরম লেখা ছিল। নিচের দিকে লাল রঙের ওপর সাদা রঙের চাঁদ সূর্য তৈরি করা ছিল।
প্রথমে ম্যাডাম ভিকাজিকামা এবং তাঁর কয়েকজন বিপ্লবী সঙ্গী যারা নির্বাসিত হয়েছিলেন তাঁরা একসাথে প্রথম পতাকায় কিছু পরিবর্তন করে প্যারিসে ভারতের নতুন পতাকা উত্তোলন করেন। এই পতাকাটিও প্রথমটির সাথে খুব মিল ছিল। এতে জাফরান, হলুদ ও সবুজ রঙের ডোরা ছিল। মাঝখানে বন্দে মাতরম লেখা হয়েছিল। একই সাথে এতে চাঁদ ও সূর্যের সাথে সাত আটটি তারা ছিল। তারপর ১৯১৭ সালে আরেকটি নতুন পতাকা সামনে আসে। ডক্টর অ্যানি বেসান্ত এবং লোকমান্য তিলক একটি নতুন পতাকা উত্তোলন করেন। এই নতুন পতাকায় পাঁচটি লাল এবং চারটি সবুজ ডোরা ছিল।
পতাকার শেষের দিকে কালো রঙের ত্রিভুজাকার আকৃতি ছিল। বাম কোণে একটি ইউনিয়ন জ্যাকও ছিল। যেখানে একটি চাঁদ নক্ষত্রের সাথে সাথে এটিতে সপ্তর্ষিকে চিত্রিত করা সাতটি তারাও ছিল। এক দশক পরে ১৯২১ সালে ভারত তার চতুর্থ পতাকা পায়। সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন চলাকালীন, বেজওয়াড়ায় অন্ধ্র প্রদেশের এক ব্যক্তি মহাত্মা গান্ধীর কাছে সবুজ এবং লাল দুটি রঙের একটি পতাকা উপহার দেন। গান্ধীজি তাতে কিছু পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি তাতে সাদা, সবুজ ও লাল তিনটি স্ট্রিপ রেখেছিলেন। একই সঙ্গে দেশের উন্নয়ন দেখানোর জন্য মাঝখানে একটি বড় চলন্ত চরকাও তৈরি করা হয়।
১৯৩১সালে আবারও ভারতের পতাকা পরিবর্তন করা হয়। এই পতাকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গ্রহণ করেছিল। এই পতাকার ওপরে জাফরান, মাঝখানে সাদা ও সবশেষে সবুজ রং করা হয়েছে। এতে মাঝখানে সাদা ডোরা ছোট আকারের সম্পূর্ণ চরকা রাখা হয়েছিল। সাদা রঙের ওপর চরকা জাতির অগ্রগতির প্রতীক। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলে দেশ পেল তিরঙ্গা পতাকা।
১৯৩১ সালে তৈরি পতাকাটি ১৯৪৭ সালের ২২শে জুলাই গণপরিষদের সভায় এক পরিবর্তনের সাথে ভারতের জাতীয় পতাকা হিসাবে গৃহীত হয়। এই পতাকায় চরকার পরিবর্তে গাঢ় নীল রঙে সম্রাট অশোকের ধর্ম চক্র দেখানো হয়েছে। ২৪ দণ্ডের চাকাকে পদ্ধতির চাকাও বলা হয়। এটি তৈরি করেছিলেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া। এটির উপরে একটি জাফরান ডোরা, মাঝখানে সাদা এবং নীচে একটি সবুজ ডোরা রয়েছে। তিনটিই সমানুপাতিক। এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ দুই বাই তিন।