Skip to content

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ঠিক আজকের দিনে এইভাবেই ভারত পাকিস্তানের ১ লক্ষ সেনাকে মাথা নত করতে বাধ্য করেছিলো !

আজকের যে স্বাধীন ভারতে আমরা বসবাস করছি সেটা এ রকমই স্বাধীনতা লাভ করেনি এর স্বাধীনতা লাভের পেছনে রয়েছে অনেক মানুষের রক্ত, অনেক মানুষের ঘাম আর সাথে রয়েছে তাদের বেদনাদায়ক কণ্ঠস্বর যার ফলস্বরূপ আজকে আমরা এই স্বাধীন ভারতে বসবাস করতে পারছি। আর আজকের এই ১৬ ই ডিসেম্বরের দিনটি ইতিহাসের পাতায় সোনালীও অক্ষরে লেখা রয়েছে। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানের উপর ভারতের এক ঐতিহাসিক বিজয় সম্পর্কে কথা। দেশভাগের পর পাকিস্তানিরা ভারতের ওপর কব্জা করার কত চেষ্টায় না করেছে তবে তাদের সমস্ত চেষ্টাকে বিফল করে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীরা।

এই ১৬ ডিসেম্বর তারিখ বিজয় দিবস উদযাপিত হয়, এটি সেই স্মরণীয় তারিখ, যখন ভারত যুদ্ধে ৩,৯০০ সৈন্য হারিয়েছিল কিন্তু পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিল, এবং আজকের এই দিনেটিকে ইতিহাসের পাতায় চিরদিনের জন্য লেখা হয়েছিল। কারণ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারতের ৩৯০০ ভারতীয় সৈনিক শহীদ হয়েছিল এবং ৯৮৫১ টি সৈনিক আহত হয়েছিল। যার ফলস্বরূপ পাকিস্তানি সৈনিকরা আত্মসমর্পণ করেছিল, যার ফলে স্বাধীন হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান যা আজ বাংলাদেশ নামে খ্যাত।এখন চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই দিন সম্পর্কিত কিছু বিষয়…

১. ১৯৭১ সালে এই যুদ্ধ আরম্ভ হয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে সামরিক ক্ষমতাচ্যুত করার আদেশ দেন।

২.যখন শেখ মুজিমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তারপরে পাকিস্তান থেকে অনেক শরণার্থীরা ভারত আসা শুরু করেছিল। তখন ভারতে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। ভারতের ওপর চাপও পড়তে থাকে তারা যেনো ওখানে সেনাদের উপর কোন প্রকার হস্তক্ষেপ না করে।

3. তখন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী চেয়েছিলেন যে, এপ্রিল মাসে পাকিস্তানকে আক্রমণ করা হবে এবং তিনি সেনা প্রধান স্যাম মানেকশ এর ও মতামতও গ্রহণ করেছিলেন। মানেকশো পরিষ্কারভাবে ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন যে তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধ করবেন।

৪. এই সময় ভারতে কাছে শুধু মাত্র ১ টি পর্বতীয় বিভাগ ছিল সেতু নির্মাণ করার ক্ষমতা ছিল না। আর সেই সময় বর্ষার সূত্রপাত হতে চলছিল এভাবে পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করে ভয়ংকর পরিস্থিতি তে পড়তে পারতো ভারতীয় সেনা জওয়ানরা।

৫. ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে যখন ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার একটি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন পাকিস্তানি বায়ুসেনা ভারতীয় বায়ুসেনা কে পার করে পাঠানকোট, শ্রীনগর, যোধপুর, অমৃতসর ,আগ্রা সৈনিক হাওয়াই আড্ডায় বোমা ফেলতে শুরু করে দেয়।

৬. ইন্দিরা গান্ধী সেই সময় দিল্লিতে ফিরে এসে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক করেন এবং বলেছিলেন যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেই সময় দ্রুত গতিতে অগ্রসর ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্ব দিকে যশোর ও খুলনা দখল করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর রণনীতি ছিল যে প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলি কে ছেড়ে আগে এগিয়ে যাওয়া যাক কিন্তু মানিকশো চট্টগ্রাম দখল করার ওপর জোর দিতে থাকেন।

৭. ১৪ ডিসেম্বর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে একটি গুপ্ত সন্দেশ আসে যে, ঢাকার সরকারি হাউসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে পাকিস্তানি প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করবেন। তখন ভারতীয় সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিল যে এই বৈঠকে মিগ ২১ বিমান থেকে ভবনের উপর বোম ফেলানো হবে আর হলো ঠিক সেরকমই ওই সময় গভর্নর মল্লিক নিজের কাঁপানো হাত দিয়ে ইস্তফা লিখেছিলেন।

৮. ১৬ ই ডিসেম্বর সকালে জেনারেল জেকবের কাছে মানিকশো থেকে সন্দেশ আছে যে সন্দেশে লেখা ছিল যে তারা যেন আত্মসমর্পণের জন্য তৈরি হয়ে ঢাকায় পৌঁছে যায় যত দ্রুত পারে। ঢাকায় নেওয়াজের কাছে ২৬৪০০ সৈনিক মজুদ ছিল যেখানে ভারতের কাছে ছিল মাত্র ৩০০০ সৈনিক তাও ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে।
যখন জেকব নিয়াজির ঘরে পৌঁছেছিলেন তখন নীরবতা ছায়া ছিল এবং আত্মসমর্পণের কাগজটি টেবিলে রাখা হয়েছিল। ইস্টার্ন আর্মি কমান্ডারলে। জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরা ওখানেই আসতে চলেছিলেন।

৯.সন্ধ্যা সাড়ে চারটার দিকে জেনারেল আরোরা হেলিকপ্টার থেকে ঢাকায় আসেন জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং নিয়াজী, ইস্টার্ন আর্মি কমান্ডার টেবিলের সামনে বসে ছিলেন। আত্মসমর্পণের কাগজটিতে উভয়ই স্বাক্ষরিত করেছিল এবং নিয়াজী বিনীত চোখ দিয়ে তার কাঁধের ব্যাচ টি টেবিলের মধ্যে নামান ও  তিনি তার রিভলবার টি আত্মসমর্পণ করেন। এর পাশাপাশি ৯৩০০০ পাকিস্তানি সৈন্যকে যুদ্ধাপরাধী করা হয়।

১০. সেই সময় ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্ট হাউসে একটি সাক্ষাত্কার দিচ্ছিলেন আর তখনই জেনারেল মানিকশো তাকে বাংলাদেশের মহিমান্বিত বিজয় সম্পর্কে বলেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় এত শব্দের মধ্যেও তার যুদ্ধের বিজয় ঘোষণা করেন।