Skip to content

কীভাবে হয়েছিল রাধার মৃত্যু আর কেনই বা কৃষ্ণ ভেঙেছিল তাঁর বাঁশি ?

যখনই এই পৃথিবীতে প্রেমের উদাহরণ দেওয়া হয়, তখন প্রথমেই কৃষ্ণ-রাধার প্রেমের উদাহরণ আসে।রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকে জীবাত্মা ও পরমাত্মা মিলন বলা হয়ে থাকে।রাধা কৃষ্ণের প্রেম ছিল অনেক শৈশব থেকেই। যখন কৃষ্ণের মাত্র আট বছর বয়স ছিল তখনই তারা উভয়ের প্রেমে পড়েছিলেন। রাধা কৃষ্ণের দৈবিক গুণাবলীর সাথে পরিচিত ছিলেন প্রথম থেকেই। তিনি সারা জীবন নিজের মন থেকেই প্রেমের স্মৃতি ধরে রেখেছিলেন। আর এটাই ছিল তাদের সম্পর্কের বড় সৌন্দর্যের উদাহরণ।বলা হয় শ্রীকৃষ্ণের কাছে দুটি জিনিস সবচেয়ে প্রিয় ছিল যা গভীরভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত ছিল যেটা হল বাঁশি এবং রাধা।

আর শ্রীকৃষ্ণের এই বাঁশির শব্দ শুনেই রাধা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চলে আসতেন আর এই কারনেই শ্রীকৃষ্ণ তার বাঁশিটিকে সব সময় নিজের কাছেই রাখতেন। যদিও শ্রীকৃষ্ণ রাধার মিলন হয়নি তবে এই বাঁশিই তাদের এক সুরে সর্বদা বেঁধে রাখতো। আজ পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণের যতগুলি চিত্র পাওয়া গেছে তার প্রতিটির মধ্যেই এই বাঁশির চিত্র বর্তমান। শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেমের প্রতীক হিসাবে গণ্য করা হয় এই শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিটিকেই।এরকম তো অনেক প্রেমকথা রাধা ও কৃষ্ণের নামে প্রচলিত রয়েছে তবে নিচে এমনই একটি কথায় বলা হয়েছে যা অনেকে হয়তো জানেন না। যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাধার সঙ্গে প্রথমবার আলাদা হয়েছিলেন তখনকার কথা।

যখন শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে মামা কনস্ আমন্ত্রিত করেছিলেন।আর এ কথা শোনার পরই বৃন্দাবন বাসীরা দুঃখিত হয়ে গিয়েছিলেন। তবে মথুরা যাওয়ার আগে শ্রীকৃষ্ণ রাধার সাথে দেখাও করেছিলেন তার মনে চলা সমস্ত কথায় খুলে বলেছিলেন তিনি রাধাকে এবং রাধাকে বিদায় জানিয়ে তারপর তিনি  মথুরার দিকে  রওনা হন।তবে যাবার আগে রাধার কাছে ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, কিন্তু তার এই চেষ্টা সফল হয়নি।যার পর শ্রীকৃষ্ণের বিয়ে রুক্মিণীর সাথে হয়ে যায় রুক্মিণী শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়ার জন্য বহু বছর ধরে অপেক্ষা করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ কে বিবাহ করার জন্য রুক্মিণীর তার ভাই এর বিপরীতে ও গিয়েছিলেন।

বহু বছর ধরেই রুক্মিণী শ্রীকৃষ্ণ কে ভালোবাসতেন এবং এর দরুন তিনি  শ্রীকৃষ্ণকে একটি পত্র ও লিখেছিলেন যেখানে তিনি বলেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ যাতে তাকে এখান থেকে এসে নিয়ে যায়। পরে শ্রীকৃষ্ণ সেখানে গিয়ে তার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শ্রী কৃষ্ণের বৃন্দাবন ছাড়া পর থেকেই রাধার বর্ণনা খুব একটা পাওয়া যায় না তবে বৃন্দাবন থেকে যাবার আগে কৃষ্ণকে রাধা শেষবারের মতো বলেছিল যদিও শ্রীকৃষ্ণ তার কাছ থেকে বহু দূরে চলে যাচ্ছে তবে  কৃষ্ণ তাঁর হৃদয়ে সর্বদায় বিরাজমান থাকবে।

তারপর শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় চলে যান এবং মথুরায় গিয়ে তার মামা কনস্ ও অন্যান্য দানবদের হত্যা করে, তিনি তার কার্য সম্পন্ন করেন। এর পর, শ্রীকৃষ্ণ সেখানকার প্রজাদের রক্ষা করার জন্য দ্বারকায় যান এবং দ্বারকীহিতের নামে জনপ্রিয় হন। শ্রী কৃষ্ণের বৃন্দাবন ছাড়ার পর রাধার জীবন এক অন্য রাস্তায় পৌঁছে যায়। যেখানে রাধা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় একজন যাদবের সাথে। যার পর তিনি তার জীবনের সমস্ত সম্পর্ক নিষ্ঠার সাথে পালন করেন তবে তার হৃদয় সবসময়ই কৃষ্ণের জন্যই সমর্পিত ছিল।

স্ত্রী হিসাবে একজন নারীর যা কর্তব্য দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন রাধা অন্যদিকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে কারণে জন্য পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তা তিনি কর্তব্য সহকারে সম্পাদন করেন। সব দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, রাধা শেষ বারের মতো তাঁর প্রিয় কৃষ্ণর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। যখন তিনি দ্বারকায় পৌঁছেছিলেন, তখন তিনি কৃষ্ণের রুক্মিনী ও সত্যভামার বিয়ের কথা শুনেছিলেন কিন্তু তিনি দুঃখিত ছিলেন না এর জন্য। কৃষ্ণ রাধাকে দেখে খুব খুশিও হয়েছিলেন। উভয় দীর্ঘ সময়ের জন্য একে অপরের সাথে কথাও বলেন। কৃষ্ণের শহর দ্বারকাতে কেউ রাধাকে জানত না। রাধার অনুরোধে, শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে প্রাসাদে দেবিকা হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন।

রাধা সারা দিন প্রাসাদেই থাকতেন এবং প্রসাদ সম্পর্কিত নানারকম কাজগুলি দেখাশোনা করতেন। আর সুযোগ পেলেই তিনি কৃষ্ণ কে দেখতেন। কিন্তু প্রাসাদে রাধা আগের মতো কৃষ্ণের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সংযোগ অনুভব করতে পারতেন না, তাই রাধা প্রাসাদ থেকে দূরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি দূরে চলে গেলেই শ্রীকৃষ্ণের সাথে গভীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।তিনি কোথায় যাচ্ছিলেন তা তিনি নিজে জানতেন না, কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জানতেন।

ধীরে ধীরে সময় চলে আসে যখন রাধা সম্পূর্ণ একাকী এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সময় তার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রয়োজন পড়ে। শেষ সময়ে তার সামনে ভগবান কৃষ্ণ এসেছিলেন। তারপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে বলেন যেন রাধা তার কাছে কিছু দাবি করেন তবে রাধা কোন দাবি করতে অস্বীকার করেন যখন দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে বলেন তখন রাধা শ্রীকৃষ্ণ কে অনুরোধ করেন যে তিনি শ্রীকৃষ্ণ কে বাঁশি বাজানো অবস্থায় দেখতে চান আর সেই সময় শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাঁশি কে বের করে মধুর সংগীত বাজাতে শুরু করেন। কৃষ্ণ দিনরাত বাঁশি বাজাতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত না রাধা আধ্যাত্মিক রূপ থেকে কৃষ্ণর সাথে বিলীন না হয়ে যায়। বাঁশির শব্দ শুনে রাধা তার দেহকে ত্যাগ করে দেন।

যদিও ভগবান জানতেন যে তাঁর প্রেম অমর, তিনি রাধার মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে তাদের প্রেমের প্রতীকী হিসাবে বাঁশিটিকে ভেঙ্গে এবং জঙ্গলের মধ্যে ছুড়ে ফেলে দেন। তারপর থেকেই, শ্রীকৃষ্ণ সারাজীবনে কোনদিনই বাঁশি বা অন্য কোন বাদ্যযন্ত্র বাজাননি। বলা হয় যে, নারায়ণ যখন দ্রাপার যুগে শ্রীকৃষ্ণ রুপে জন্মগ্রহন করেছিলেন, তখন মাতা লক্ষ্মী রাধা রানী হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যাতে মৃত্যু লোকেও তাদের এই প্রেম সম্পর্ক বোঝায় থাকে।