ন্যানো বিরোধীদের অবাক করে দিয়ে ফের ন্যানো গাড়ি বিক্রি বাড়াচ্ছে। রতন টাটার এই স্বপ্নের ছোট্ট গাড়িটি কিছুদিন ধরে বিক্রি একেবারে কমে গিয়েছিল বলা চলে। কিন্তু ইদানিং ন্যানো গাড়ি বিক্রি অনেকটাই বেড়েছে বলে জানিয়েছে রতন টাটা। টানা তিন মাস ধরে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই ছোট্ট গাড়িটি বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ফের জায়গা করে নিয়েছে টাটা ন্যানো। ভারতের সমস্ত গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা গুলির সংগঠন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার বা সিয়াম এর দেওয়া তথ্য অনুসারে টাটা ন্যানোর বিক্রি দিন দিন বাড়ছে। সেপ্টেম্বর মাসে এই গাড়ি 31 টি বিক্রি হয়েছিল।তার পরের মাসে 31 টি থেকে বেড়ে হয় 58 টি। নভেম্বরে আরো বিক্রি বেড়ে 77 টি হয়। ওই সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে গত পাঁচ মাস ধরে যাত্রীবাহী গাড়ির বাজার একেবারে ভালো চলছিল না। এ খারাপ বাজারের হাত থেকে রেহাই পাননি মারুতি,হুন্ডাই সহ নানান নামিদামি কম্পানি। এ বছরেরই জুন মাসের ন্যানো গাড়ি তিনটি বিক্রি হওয়ায় এই গাড়ির উৎপাদন একেবারে বন্ধ করে দেবে ভেবেছিল টাটা কোম্পানি।
তারপর টাটা কোম্পানি ঠিক করল ডিলারের কাছে কেউ যদি ন্যানো গাড়ি অর্ডার দেয় তাহলেই একমাত্র গাড়ি তৈরি করা হবে। শহরাঞ্চলে ন্যানো গাড়ির চাহিদা পুরোপুরি কমে যাওয়ায় টাটার ডিলাররা অন্য কোম্পানির গাড়ি নিতে বলছিলেন ক্রেতাদের। আবার গাড়ির দাম একলা ফিরে যাওয়ার ফলে কে তারা তার থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন সিঙ্গুরে প্রথমে ন্যানো গাড়ির কারখানা করা হবে ঠিক ছিল।সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর আসনে থাকা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চেয়েছিলেন যে টাটা কোম্পানি যাতে সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরি করে। কারখানা করার জন্য অনিচ্ছুক কৃষকরা বাধা দেয়। সেই সময় বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় অনিচ্ছুক কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাথে আন্দোলনে নামেন। আর এর ফলে সিঙ্গুরে কারখানা তৈরি করার পরিকল্পনা থমকে যায় এবং এর পরিবর্তে গুজরাতের সানন্দে গাড়ি তৈরি করার প্রকল্প সরিয়ে নিয়ে যান তৎকালীন টাটা কোম্পানির চেয়ারম্যান রতন টাটা।
আর এই সমস্ত কান্ড দেখে তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টাটা কোম্পানি কে গাড়ির কারখানা করার জন্য আহ্বান জানান।এরপর 2010 সালে সানন্দ থেকেই ন্যানো গাড়ি প্রথম উৎপাদন হয়। তবে ওই কারখানা থেকে বিতর্কিতই ন্যানো গাড়ি উৎপাদন করলেও বারবার টাটা রায়েই গাড়ি নিয়ে নানা সমস্যায় পড়েছেন। এছাড়াও ন্যানো গাড়িটি তেমন বিক্রি হয়নি। ফলে টাটা কোম্পানি কে ন্যানো গাড়ি উৎপাদন বন্ধ করার পথ বেছে নিতে হয়।আর তার ঠিক এক বছর পরে রাজনৈতিক পাল্লা বদলে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতনই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেয়াতে আগ্রহী হন।
কিন্তু টাটা গোষ্ঠী এতে রাজি না হওয়ায় আদালতে যান এবং চ্যালেঞ্জ করেন। তবে শেষমেশ মমতায় জিতে যায়। তারপর শুরু হয় জমি ফিরিয়ে দিয়ে চাষবাস করার প্রক্রিয়া। কিন্তু চাষবাস প্রক্রিয়া করার চেষ্টা করলেও আদৌ কি তা শুরু হয়েছে-এই সমস্ত প্রশ্ন করছে বামেরা।রাজনৈতিক দিক থেকে মমতা জিতে গেলেও এখনও পর্যন্ত সিঙ্গুরের মানুষদের সুদিন আসেনি এমনটাই বলছেন ওখানকার কয়েকজন মানুষ। আবার অনেকেই বলছেন টাটা হলে অনেক গরিব মানুষের চাকরি হত কিন্তু কারখানা না হওয়ায় সেই সুযোগ হাতছাড়া হলো। আর বামপন্থীরা ওইসব মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে লঙ মার্চে আয়োজন করতে দেখা গিয়েছে বাম সমর্থকদের।
আর এইসব দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সাথে বামেদের ও আক্রমণ করতে শুরু করে দিয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যন্তও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামেদের আর অস্তিত্ব নেই ভেবে তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি কে আক্রমণ করতে দেখা যেত। সিঙ্গুরে বাম রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে যে আবার সেই সিঙ্গুর কে অবলম্বন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বামেরা। গত নভেম্বর মাসে বামেরা সিঙ্গুরের কৃষকদের নিয়ে লঙ মার্চ করেছিলেন সেই সময় ন্যানো বিরোধী মমতার সমর্থকরা তাদের কটাক্ষ করতে শুরু করে- তারা বলতে থাকে যে ওই গাড়ি তো কেউ কিনে না,সানন্দে ওই গাড়ি উৎপাদন হয় না ইত্যাদি আরো নানা রকম কথা বলে। কিন্তু এই কটাক্ষ গত তিন মাসে ন্যানো গাড়ি বিক্রির রেকর্ড জবাব দিয়ে দিচ্ছে। এই তথ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরো ন্যানো বিরোধীদের হতাশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।