লোকসভা নির্বাচনের আগে আরো একবার ধাক্কা খেলো তৃণমূল কংগ্রেস। চিটফান্ড কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ কেডি সিংহের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর অনুযায়ী, অ্যালকেমিস্ট সংস্থার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে প্রতারণা করেন এই তৃণমূল সাংসদ। সেই মামলাতেই কেডির 2600 কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করল এডি। এর পাশাপাশি ইডি তার দুটো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট সিল করে দিয়েছে। এই অ্যালকেমিস্ট সংস্থার মাধ্যমে বাজার থেকে 1900 কোটি টাকা তোলার খবর রয়েছে। এ নিয়ে এই প্রসঙ্গে গত বছর 8 ই আগস্ট কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় কেডি সিংহের অ্যালকেমিস্ট সংস্থার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির কোন অংশই দেশের বাইরে বিক্রি করতে বা পাঠাতে পারবেন না।
এমনকি এই সংস্থা বিদেশের কোন সংস্থা সাথে লেনদেন করতে পারবে না। যদি লেনদেন করতে চায় তাহলে হাইকোর্টের অনুমতি নিতে হবে তাকে। আদালতের এই কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পর ইডির ফাঁদে পা দিল এই তৃণমূল সাংসদ। ইডি তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।শুধু এটাই নয় কলকাতা পুলিশ তার বিরুদ্ধে আনা চিটফান্ড কান্ডের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। চিটফান্ড প্রতারণার তদন্তকারী কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নারদ স্ট্রিং ওপারেশন সম্বন্ধে আমরা সবাই পরিচিত। এই নারদ স্ট্রিং অপারেশনের জন্য কেডি সিংহের সংস্থা অ্যালকেমিস্ট 40 লক্ষ টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ম্যাথু স্যামুয়েল। কেডি সিং অর্থাৎ কুনওয়ার দীপ সিংহ 1961 সালের 21 এ আগস্ট পাঞ্জাবের ফতে গড় সাহিবে তার জন্ম হয়। ইনি 19 বছর বয়স থেকে নিজের ব্যবসাপাতি শুরু করেন। প্রথম দিকে তার অতটা পরিচিতি না থাকলেও 1988 সাল থেকে তার পরিচিতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ওই বছরেই তিনি চণ্ডীগড়ে টারবো সংস্থা নামে ব্যবসা এক শুরু করেন। এই সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় অ্যালকেমিস্ট। এক সূত্র থেকে জানা যায় এই অ্যালকেমিস্ট সংস্থা 18 মাসের মধ্যে প্রায় 15 লক্ষ্য সাধারণ মানুষদের কাছে প্রায় 10 হাজার কোটি টাকা তুলেছে।
সারদা কোম্পানির মতোই এই সংস্থাটি বাংলা, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, অসমের মানুষদের বোকা বানিয়ে টাকা তুলে গেছেন এই অ্যালকেমিস্ট সংস্থাটি। এরপর কেডি সিংহ অ্যালকেমিস্ট সংস্থাটি চালানোর সাথে সাথে তিনি রাজনীতিতে পা দেন। প্রথমে তিনি 2010 সালে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ড থেকে ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চার সমর্থনে রাজ্যসভার সদস্য পদে যোগদান করেন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই 2014 সালে তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় তার আসনটি ধরে রাখেন। তিনি এক সময় মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। 2004 সাল থেকে এ রাজ্যে অ্যালকেমিস্ট এর কারবার শুরু হয়।তখন এ রাজ্যে বাম রাজত্ব ছিল। দুর্গাপুর একটি পোল্ট্রি ও হ্যাচারি ফার্ম খোলার জন্য তখন সিপিএমের নেতাদের সাথে বন্ধুত্ব করেন কেডি সিং। রাজনীতিতে পা দেওয়ার পর অনেক তর্ক-বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয় এই কেডি সিং কে। তিনি যখন ঝাড়খন্ড মুক্তি মোরচা সভার পার্থী ছিলেন তখন স্টিং অপারেশনে দেখা যায় তাকে ভোট দেওয়ার জন্য 6 জন বিধায়ককে টাকা নিতে।
যা নিয়ে গোটা রাজনীতি তোলপাড় হয়ে যায়। ওই ভিডিওতে ঘুষের অংক ছিল 50 লক্ষ থেকে দু কোটি টাকা পর্যন্ত। 2009 সালে অ্যালকেমিস্ট এর 11 টি দপ্তরে একসাথে আয়কর দপ্তর হানা দিয়ে নগদ 22 কোটি টাকা উদ্ধার করে। এরপর 2014 সালের মার্চ মার্চের দিল্লি অন্তর রাজ্য বিমানবন্দরে বহু টাকা সমেত হাতে নাতে ধরা পড়েন কেডি সিং। হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের প্রয়োজনে তিনি এই টাকাটি গুহাটিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই ঘটনাটি ঘটার পর দিল্লিতে নির্বাচন কমিশন তৃণমূলকে চিঠি পাঠিয়েছিল।
2012 সালে গোটা দেশে চিটফান্ড সংস্থাগুলির পর্দা ফাস হতে থাকে। আমানতকারীরা বিভিন্ন সংস্থায় তাদের জমানো টাকা ফেরতের দাবি জানায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতর এই অ্যালকেমিস্ট সংস্থাটিকে জানিয়ে দেয়, বাজার থেকে আর টাকা তোলা যাবে না। এরপর 2015 সালের আগস্ট মাসে সেবি বলে দেয় আমানত করিদের 15 শতাংশ সুদে টাকা ফেরত দিতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশ তারা অমান্য করেছিলেন। 2012 সালে অ্যালকেমিস্ট এর চেয়ারম্যান পদ থেকে নিজে সরে গিয়ে নিজের ছেলে করনদীপ সিংকে চেয়ারম্যান করে নিজেকে অ্যালকেমিস্ট এর একটি অবৈতনিক পদে রাখেন। এর পর কেডি সিং অনন্ত মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রায় অধিকাংশ শেয়ার কিনে ফেলেন। তিনি সমস্ত শেয়ার কিনে নেওয়ার পর নিউজ পোর্টাল তহেলকা ডট কম এর মালিকানা আছে কেডি সিংহের হাতে।